#প্রার্থনা
---অরুণকুমার সরকার
যদি মরে যাই
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই,
যে ফুলের নেই কোনো ফল
যে ফুলের গন্ধই সম্বল;
যে গন্ধের আয়ু এক দিন
উতরোল রাত্রিতে বিলীন
যে রাত্রি তোমারই দখলে
আমার সর্বস্ব নিয়ে জ্বলে,
আমার সত্তাকে করে ছাই ।
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই ।
.....................................................................................
:::বেহুলার সাম্পান:::
---রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
তোমাকে পাবার প্রস্তুতি আনে বোধ,
দুঃখকে তাই শাসাই রুক্ষ স্বরে,
বেদনাকে তাই মোড়াই কাফনে শাদা-
তোমাকে রাখার পরিসর গড়ি মনে ।
মন্বন্তরে অন্তরে যতো ক্লেদ,
মৃত সবুজের যতো পরাজিত বোঝা,
যতো পুরাতন পচনের ঝুলকালি,
ঝেড়ে মুছে কিছু করি তারে উজ্জ্বল ।
কিসের এমন প্রেরণা পেয়েছে মন
নষ্ট আঁধারে শ্রেষ্ঠ বাসনা খোঁজে ।
বুকের অসুখে সুখের সপ্ন লিখে
ঘন দুর্যোগ
তবু সে ভাসায় বেহুলার সাম্পান...
তোমাকে পাবার প্রস্তুতি বাড়ে বোধে
তোমাকে পাবার প্রেরণায় জাগি রাত ।
নৈরাজ্যের খড়গের তলে মাথা,
ঘাড় কাত করে তবু দেখি রোদ
কতোটা পেরোলো আমায় ।
......................................................................................................
#আমি অনেক কষ্টে আছি
:::আবুল হাসান:::
আমার এখন নিজের কাছে নিজের ছায়া খারাপ লাগে
রাত্রিবেলা ট্রেনের বাঁশি শুনতে আমার খারাপ লাগে
জামার বোতাম আটকাতে
অমন কেন যত্ন করে লাগিয়ে দিতে?
অমন কেন শরীর থেকে
আস্তে আমার ক্লান্তিগুলো উঠিয়ে নিতে?
তোমার বুকের নিশিথ কুসুম
আমার মুখে ছড়িয়ে দিতে?
জুতোর ফিতে প্রজাপতির মতন তুমি উড়িয়ে নিতে?
বেলজিয়ামের আয়নাখানি কেন তুমি ঘরে না রেখে
অমন কারুকাজের সাথে তোমার দুটি চোখের মধ্যে রেখে দিতে?
রেখে দিতে?
আমার এখন চাঁদ দেখতে খারাপ লাগে
পাখির জুলুম, মেঘের জুলুম, খারাপ লাগে
কথাবার্তায় দয়ালু আর পোশাকে বেশ ভদ্র মানুষ
খারাপ লাগে,
এই যে মানুষ মুখে একটা মনে একটা
খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
মোটের উপর আমি এখন কষ্টে আছি,
কষ্টে আছি বুঝলে যুথী
আমার দাঁতে আমার নাকে, আমার চোখে কষ্ট ভীষণ
চতুর্দিকে দাবী আদায় করার
মতো মিছিল তাদের কষ্ট ভীষণ
বুঝলে যুথী,
হাসি খুশী উড়নচন্ডী মানুষ
আমার তাইতো এখন খারাপ লাগে
খারাপ লাগে
আর তাছাড়া আমি কি আর যীশু না হাবিজাবি
ওদের মতো সব সহিষ্ণু?
আমি অনেক
কষ্টে আছি কষ্টে আছি কষ্টে আছি ।
...................................................................................
:::প্রত্যাবর্তন:::
– হেলাল হাফিজ
প্রত্যাবর্তনের পথে
কিছু কিছু ‘কস্ট্লি’ অতীত থেকে যায়।
কেউ ফেরে, কেউ কেউ কখনো ফেরে না।
কেউ ফিরে এসে কিছু পায়,
মৌলিক প্রেমিক আর কবি হলে অধিক হারায়।
তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই,
আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায়,
ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়।
প্রত্যাবর্তনের প্তহে
পিতার প্রস্থান থেকে,
থাকে প্রণয়ের প্রাথমিক স্কুল,
মাতার মলিন স্মৃতি ফোটায় ধ্রুপদী হুল,
যুদ্ধোত্তর মানুষের মূল্যবোধ পালটায় তুমুল,
নেতা ভুল,
বাগানে নষ্ট ফুল,
অকথিত কথার বকুল
বছর পাঁচেক বেশ এ্যানাটমিক ক্লাশ করে বুকে।
প্রত্যাবর্তনের পথে
ভেতরে ক্ষরণ থাকে লাল-নীল প্রতিনিয়তই,
তাহকে প্রেসক্লাব–কার্ডরুম, রঙিন জামার শোক,
থাকে সুখী স্টেডিয়াম,
উদ্গ্রীব হয়ে থাকে অভিজাত বিপনী বিতান,
বাথরুম, নগরীর নিয়ন্ত্রিত আঁধারের বার,
থাকে অসুস্থ সচ্ছলতা, দীর্ঘ রজনী
থাকে কোমল কিশোর,
প্রত্যাবর্তনের পথে দুঃসময়ে এইভাবে
মূলত বিদ্রোহ করে বেহালার সুর।
তারপর ফেরে, তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই,
আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায়,
ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়
0 comments:
Post a Comment